কালিহাতী প্রেসক্লাব অতপর রিপোর্টার্স ইউনিটির প্রাসংগিকতা
- প্রকাশিত : রবিবার, ২৪ মার্চ ২০২৪
- / ২২৯ বার পড়া হয়েছে
কালিহাতী প্রেসক্লাব অতপর রিপোর্টার্স ইউনিটির প্রাসংগিকতা
————————————— রশিদ আব্বাসী
টাঙ্গাইলের রাজনীতি,মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলন শিল্প-বাণিজ্য, শিক্ষা, চিকিৎসা, সাহিত্য- সংস্কৃতি ও সাংবাদিকতায় সমৃদ্ধ কালিহাতী জনপদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য।
কালিহাতীর উর্বর মাটি জন্ম দিয়েছে খ্যাতিমান মানুষদের যারা নিজনিজ মনন মেধা ও সাহসে অনন্য স্থান দখল করেছেন বাংলাদেশ তথা বিশ্ব ইতিহাসে যা কোনদিন ম্লান হবার নয়। আমরা আমাদের পূর্বসূরীদের গৌরবোজ্জ্বল কৃতিত্বে গৌরবান্বিত।
রত্নগর্ভা কালিহাতী জন্ম দিয়েছে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, রাজনীতির সিংহ পুরুষ জননেতা আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী, মুক্তিযুদ্ধের কিংবদন্তির মহানায়ক বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী, মহান স্বাধীনতার ইস্তেহার পাঠক শাজাহান সিরাজ, বহির্বিশ্বে আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের স্বপক্ষে জনমত তৈরি করতে অবিস্মরণীয় ভূমিকা পালন করেছেন সাবেক রাস্ট্রপতি বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী,মুক্তিযুদ্ধে কাদেরিয়া বাহিনীর বেসামরিক প্রধান, সাবেক সচিব ও রাস্ট্রদূত আনোয়ারুল আলম শহীদ সরকারি উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা সাবেক সচিব ইব্রাহিম হোসেন খান।
অ্যাডমিরাল মুহাম্মদ ফরিদ হাবিব (এনডি, এনবিপি, ওএসপি, বিসিজিএম, এনডিসি , পিএসসি) বাংলাদেশ নৌবাহিনীর প্রথম নৌবাহিনী প্রধান। তিনি বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ইতিহাসে প্রথম চার তারকা অ্যাডমিরাল।
রাজনীতিক আতিকুর রহমান সালু, নারী মুক্তিযোদ্ধা রহিমা সিদ্দিকী, রাজনীতিক হাজেরা সুলতানা ভাষা সৈনিক ও আন্তর্জাতিক চিকিৎসা বিজ্ঞানী ডক্টর মির্জা মাজহারুল ইসলাম, বৃটেনের রানীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ছিলেন ডাক্তার অতুল, জোয়াইরের ডাক্তার নাগ বাবুর খ্যাতি সর্বমহলে, ডাক্তার শাহ আলম, ডাক্তার সৈয়দ আশরাফ হোসেন নিজ পেশায় অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছেন ।
বরেণ্য অর্থনীতিবিদ ইস্কান্দার মির্জা, দেবপ্রিয় ভট্রাচার্যের জন্মও কালিহাতীতেই।
দেশের সর্বোচ্চ আইনাঙ্গগনের উজ্জ্বল নক্ষত্রের আসনে, বিচারপতি দেবেশ ভট্রাচার্য,বিচারপতি ইসমাইল হোসেন, বিচারপতি আতোয়ার রহমান ।
খ্যাতনামা লোক বিজ্ঞানী ডক্টর আশরাফ সিদ্দিকী,নাট্যব্যক্তিত্ব আব্দুর রহমান রক্কুর জুড়ি নেই।
শিল্পপতি লায়ন ফেরদৌস আলম ফিরোজ,সালাহউদ্দীন আলমগীর রাসেল, নজরুল ইসলাম খান, লুৎফর রহমান মতিন দেশের শিল্প বাণিজ্যে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছেন।
কবি সাহিত্যিক ও সাংবাদিক আব্দুস সাত্তার,এম, রকিব, রফিকুল ইসলাম তালুকদার রতন, কামরুল হাসান চৌধুরী, মির্জা শাকিল,অরণ্য ইমতিয়াজ,খন্দকার মাসুদুল আলম, মালেক আদনান, হাবিব সরকার, তোফাজ্জল হোসেন তুহিনসহ আরো অনেকেই যারযার অবস্থান থেকে জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে কালিহাতীকে সাংবাদিকতার জগতে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন।
কালিহাতী প্রেসক্লাব গঠিত হয় ১৯৮৫ সনে টাঙ্গাইল থেকে প্রকাশিত তৎকালিন ঝংকার পত্রিকার সম্পাদক এম,এ, রকিবের পরামর্শে ওয়াহেদুজ্জামান মতি’র সহযোগিতায় রফিকুল ইসলাম রতনের হাতধরে।
তৎকালিন কালিহাতী উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল হামিদ প্রামাণিকের পৃষ্ঠপোষকতায় এম, এ, জলিলকে সভাপতি ও নজরুল ইসলাম খানকে সাধারন সম্পাদক করে কালিহাতী উপজেলা অডিটোরিয়ামে কালিহাতী প্রেসক্লাবের যাত্রা শুরু হয়। সাময়িকভাবে উপজেলা চত্বরে পঞ্চমী ভবনকে প্রেসক্লাবের অস্থায়ী কার্যালয় হিসাবে ব্যবহার করার মৌখিক অনুমতি দিয়ে উপজেলা গেটের সাথে বর্তমান সাধারন গ্রন্থাকারের জায়গায় কালিহাতী প্রেসক্লাবের নির্ধারিত স্থান উল্লেখ করে একটি সাইনবোর্ড টানানো হয়।
পরবর্তীতে বিএডিসির গার্ড রুমে স্বল্প পরিসরে প্রেসক্লাবের কর্মকান্ড চলতে থাকে । তৎপর বিএডিসি’র কোয়ার্টার ভবনে অস্থায়ীভাবে প্রেসক্লাবের কার্যক্রম চালানোর জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসার একটি লিখিত অনুমতি পত্র প্রদান করেন। ৪ দশক সময়ে বিভিন্ন মেয়াদে কালিহাতী প্রেসক্লাবের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন এম, এ, জলিল, শহিদুল ইসলাম খান,শামছুল হক হিরো, গৌরাঙ্গ বিশ্বাস, রঞ্জন কৃষ্ণ পন্ডিত,মনিরুজ্জামান মতিন, দুলাল হোসেন রানা, আমি রশিদ আহাম্মদ আব্বাসী, হারুন অর রশিদ সেলিম, শাহ আলম, মীর আনোয়ার হোসেন, তারেক আহমেদ।
সাধারন সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন, নজরুল ইসলাম খান,বুলবুল মল্লিক, শাহ আলম,রিমন সিদ্দিকী, শহিদুল ইসলাম শহিদ,কামরুল হাসান, দাস পবিত্র, মুশফিকুর রহমান মিল্টন প্রমুখ।
বর্তমান সভাপতি রঞ্জন কৃষ্ণ পন্ডিত ও সাধারন সম্পাদক মুশফিকুর রহমান মিল্টন দায়িত্ব পালন করছেন।
৪ দশকের দীর্ঘ পথপরিক্রমায় কালিহাতী প্রেসক্লাবের জন্য স্থায়ী একখন্ড জমি ও ঘরের ব্যবস্থা করা যায়নি। প্রশাসন ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতাদের কাছে বার বার অনুনয় বিনয় করেও প্রেসক্লাবের একখন্ড জমি ও একটি ঘর পাওয়া যায়নি। একাধিক বার সরকারি জায়গা বরাদ্ধের জন্য আবেদন করা হলেও লালফিতার দৌরাত্ম্যের কাছে আমরা হেরে গেছি ।
তদুপরি আমরা কৃষিবিদ মরহুম মীর মিজানুর রহমানের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বিএডিসি’র জায়গা ভাড়া দেয়ার টেন্ডার আহবান করা হলে যারা ওই টেন্ডারের সিডিউল ক্রয় করে ছিলেন অনেক দৌড়ঝাঁপ করে সকল সিডিউল ক্লোজ করে আমিসহ আমরা প্রেসক্লাবের পক্ষে ৩ টি সিডিউল জমা দেই এবং সরকারি প্রক্রিয়া শেষে প্রেসক্লাব সভাপতি হিসেবে আমার নামে টেন্ডার বিট হয়।জামানতের টাকা জমা দেয়ার আগেই আমার কমিটির মেয়াদকাল শেষ হয়ে যায়। অতপর হারুন অর রশিদ সভাপতি ও শাহ আলম সাধারন সম্পাদকের দায়িত্ব প্রাপ্ত হন।এপর্যায়ে একজন রাজনৈতিক নেতার লুলোপ দৃষ্টি পড়ে ওই জায়গার প্রতি। অজ্ঞাত কারনে তড়িঘড়ি করে বিএডিসি’র জায়গা ছেড়ে দিয়ে হারুন অর রশিদ সেলিম ও শাহ আলম বাসস্ট্যান্ডে প্রেসক্লাবের জন্য ঘরভাড়া নিয়ে প্রেসক্লাবের কর্মকান্ড চালাতে থাকেন। চিরতরে বিএডিসি’র জায়গা আমাদের হাতছাড়া হয়ে যায়। তাছাড়াও কালিহাতী প্রেসক্লাব নেতৃত্ব সাংবাদিক বান্ধব না হয়ে প্রশাসন বান্ধব হয়ে রাজনৈতিক লেজুরবৃত্তি শুরু করে পোষ্য সাংবাদিকতায় মনোনিবেশ করে নিজেদের রুটিরুজির ধান্দায় মেতে ওঠেন ।অন্যদিকে ব্যক্তিস্বার্থে অপেশাদার রাজনৈতিক ব্যক্তি, ব্যবসায়ীদেরকে প্রেসক্লাবের সদস্য পদ দিয়ে স্বকীয়তা হারায় কালিহাতী প্রেসক্লাব।
যার ফলশ্রুতিতে অকুতোভয় সাংবাদিকরা দিনেদিনে নিগৃহীত হতে থাকেন।
তৎকালিন ইউএনও সাইফুল্লাহিল আযমের নির্দেশে কালিহাতীর এসিল্যান্ড অফিস থেকে বাংলা বাজার পত্রিকার প্রতিনিধি আইয়ুব খানকে দ্রুত বিচার আইনে মামলা দায়ের করে কারাগারে পাঠানো হয়। বিনাদোষে আইয়ুব খান দীর্ঘদিন কারা ভোগের পর সাংবাদিকতার জগত থেকে হারিয়ে যান। ষড়যন্ত্র মামলা হয় শামসুল হক হিরুর নামে, রঞ্জন কৃষ্ণ পন্ডিতের নামে,ক্ষমতাসীনদের রোষানলে পড়ে মনিরুজ্জামান মতিনকে দীর্ঘদিন বাড়ীঘর ছাড়া হয়ে আত্মগোপনে থাকতে হয়। শারীরিকভাবে লাঞ্চিত হন তারেক আহমেদ, মামলা হয় এম, এম হেলাল বাদশার নামে, অনেক গুলো কাল্পনিক মামলা দিয়ে ননবেইলেবল চার্জসিট দেয়া হয় আমার বিপক্ষে, ষড়যন্ত্র মুলক মামলা হয় ইংরেজি দৈনিক নেক্সস্ট নিউজ সম্পাদক, তোফাজ্জল হোসেন তুহিনের নামে,মানহানীসহ সাইবার ক্রাইম এ্যাক্টে মামলা হয় যুগধারা সম্পাদক হাবিব সরকারের বিরোদ্ধে।
আমাদের দূর্ভাগ্য এসকল সাংবাদিকদের নিগ্রহের বিষয়ে কালিহাতী প্রেসক্লাব কার্যকরী কোন পদক্ষেপ নিতে সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছে ।সাংবাদিক দের হয়রানি কারকদের সাথে প্রেসক্লাব নেতৃত্ব দহরম মহরম সম্পর্ক করে সাংবাদিকদের অধিকারকে বিসর্জন দিয়ে প্রেসক্লাবের নাম ব্যবহার করে কেউ কেউ প্রশাসন ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক নেতাদের কাছ থেকে বিশেষ সুবিধা নেয়ার অভিযোগও বিস্তর।
তাছাড়াও প্রেসক্লাবের নাম ব্যবহার করে একাধিক ব্যক্তি অনৈতিক কর্মকান্ডের সাথে যুক্ত থাকার আভাসও আছে।
এমতাবস্থায় প্রেসক্লাবের অখন্ডতা অক্ষুন্ন রেখে কালিহাতীর গণমাধ্যম কর্মীদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি, সামাজিক ও পেশাগত দায়িত্ব পালনে নিরাপত্তা এবং সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সময়ের দাবী একটি ঐক্যবদ্ধ প্লাটফর্ম। আর ওই দাবীর প্রতি একাত্বতা প্রকাশ করেই সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক পেশাজীবী সংগঠন হিসাবে কালিহাতী রিপোর্টারস ইউনিটির আত্মপ্রকাশ।
কালিহাতী উপজেলায় সক্রিয় সাংবাদিকরাই ওই সংগঠনের সদস্য হবেন এবং ওই সংগঠন বুদ্ধিবৃত্তিক কর্মকান্ড পরিচালনা করে সামাজিক ও আদর্শিক দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি তাদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ গ্রহন করে নিজেরা প্রশিক্ষিত হবেন।
যেকোনো অনিয়মের বিপক্ষে তাদের শানিত লেখনি সচল রাখার দীপ্ত শপথে এগিয়ে যাওয়ার অবিচল লক্ষ্যে আপোষহীন ভূমিকা রাখবে কালিহাতী রিপোর্টার্স ইউনিটি ।
এছাড়াও পেশাগত ও সামাজিক নিরাপত্তা বিধানে কালিহাতী রিপোর্টার্স ইউনিটি তাদের সদস্যসহ দেশের সকল মানুষের কল্যাণে নিবেদিত থাকবে।
কোন রাজনৈতিক ও ব্যক্তির লেজুড়বৃত্তি করবেনা কালিহাতী রিপোর্টার্স ইউনিটি ।
দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি অবিচল আস্থা ও বিশ্বাসে গত ১৭ মার্চ জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিনে কালিহাতী রিপোর্টার্স ইউনিটির যাত্রা শুভ ও সফল হোক। দেশ ও মানুষের কল্যাণে নিবেদিত হোক সাংবাদিকতা ।
লেখকঃ সিনিয়র সাংবাদিক