টাঙ্গাইল ০৯:২৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২১ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ খবর :
কালিহাতীতে জাতীয় ইঁদুর নিধন অভিযান ২০২৪ এর শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠিত কালিহাতীতে ৪ দিন যাবত মাদ্রাসা ছাত্র নিখোঁজ মধুপুরে প্লাস্টিকের বস্তা ব্যবহারের অপরাধে ৫টি রাইস মিলে জরিমানা বাসাইলে আ.লীগের সাবেক সভাপতি গাউস আটক কালিহাতী উপজেলা মহিলা দলের উদ্যোগে নারীদের মধ্যে তারেক রহমানের ৩১ দফা প্রচারে কর্মী সভা অনুষ্ঠিত কালিহাতীতে ৫৩ তম জাতীয় সমবায় দিবস পালিত মধুপুরে ক্লিনিক ও ফার্মেসীতে ৬০ হাজার জরিমানা কালিহাতীর বাংড়া’তে বিপদজনক অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকা মরা আমগাছ: বড় দুর্ঘটনার শঙ্কা কালিহাতীতে যুবদলের দু’গ্রুপের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন কালিহাতীতে পিক-আপের মুখোমুখি সংঘর্ষে মোটরসাইকেল আরোহী নিহত
ব্রেকিং নিউজ :
  • এটিভি বাংলা  অনলাইন নিউজ পোর্টালে সংবাদ প্রতিনিধি (সাংবাদিক) নিয়োগ দেশের বিভিন্ন  জেলা, থানা/উপজেলা এবং বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ‘এটিভি বাংলা  নিউজ পোর্টাল ’ পত্রিকায় সংবাদ প্রতিনিধি (সাংবাদিক) নিয়োগ দেয়া হবে। ‘এটিভি বাংলা [email protected]০১৭১৪৯১৮২৫৫

যে ছাত্রদের পড়িয়েছি তারাই আমার হাতের কবজি কেটেছে’

মো: নাহিদ খান
  • প্রকাশিত : শনিবার, ২৫ জুন ২০২২
  • / ১১১ বার পড়া হয়েছে

ঢাকা মেডিকেল কলেজে (ঢামেক) হসপাতালের ১০২ নম্বর ওয়ার্ডের ১১ নম্বর বিছানায় শুয়ে কবজি বিচ্ছিন্ন হওয়া হাতের দিকে অপলক তাকিয়ে ছিলেন কলেজশিক্ষক তোফাজ্জেল হোসেন (৫২)। যে হাতে লিখে শিক্ষার্থীদের পড়াতেন তিনি সেই ডান হাতের কবজি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে সন্ত্রাসীদের ধারালো অস্ত্রের কোপে। এই শিক্ষকের কাছে সবচেয়ে কষ্টের বিষয়, তিনি যে ছাত্রদের পড়িয়েছেন তারাই ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তার কবজি বিচ্ছিন্ন করেছেন।

আহত শিক্ষক কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার বাঁশগ্রাম আলাউদ্দিন আহম্মেদ কলেজের অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর শেষ করে প্রায় ১২ বছর ধরে ওই কলেজে শিক্ষকতা করেন তোফাজ্জেল হোসেন।

কুপিয়ে কবজি বিচ্ছিন্ন করার ঘটনায় কুমারখালী থানায় তোফাজ্জেল হোসেনের বড় ছেলে একটি মামলা করেছেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার (৩১ মে) দুপুরে কলেজ থেকে বের হয়ে বংশীতলা এলাকা দিয়ে শহরে যাচ্ছিলেন তোফাজ্জেল হোসেন। এ সময় তাকে কয়েকজন সন্ত্রাসী ঘিরে ধরে পেটাতে থাকেন। তিনি সেখান থেকে দৌড়ে কয়েক শ গজ দূরে নির্মাণাধীন একটি সেতুর ওপর যান। সেখানে অবস্থান নেওয়া আরও ১০-১২ জন সন্ত্রাসী রামদা-চাপাতি দিয়ে তাকে কোপাতে থাকেন।

শিক্ষক তোফাজ্জেল হোসেন পড়ে গেলে তার পিঠেও এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকেন হামলাকারীরা। এরপর হামলাকারীরা চলে গেলে স্থানীয় লোকজন তোফাজ্জেলকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। ওই দিন সন্ত্রাসীদের এলোপাতাড়ি কোপে তার বাঁ পাজর, মেরুদণ্ডের হাড়সহ শরীরের ১৩টি স্থানে গুরুতর জখম হয়। কুষ্টিয়া জেলারেল হাসপাতালে অস্ত্রোপচার শেষে ওই দিন রাতেই ঢামেকে নিয়ে আসা হয় তাকে।

ঢামেক হাসপাতালের পুরোনো ভবনের নিচতলার ১০২ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসা চলছে তোফাজ্জেল হোসেনের। শুক্রবার (৩ জুন) ওই ওয়ার্ডের ১১ নম্বর বিছানায় তোফাজ্জেল হোসেনকে শুয়ে থাকতে দেখা যায়। জ্ঞান ফিরলেও কথা বলতে কষ্ট হচ্ছিল তার। খুব ধীরে ধীরে দু-একটি কথা বলছেন তিনি।

কথা বলতে চাইলে কলেজশিক্ষক তোফাজ্জেল হোসেন  বলেন, ১০ থেকে ১২ জন মিলে রামদা আর চাপাতি দিয়ে কুপিয়েছেন। আমিতো কোনোদিন কারও ক্ষতি করিনি। দীর্ঘ ১২ বছর যে হাত দিয়ে লিখে শিক্ষাদান করে আসছি সেই হাত কেটে দিল সন্ত্রাসীরা! যারা হামলা করেছেন তাদের সবাইকে আমি চিনি। এলাকায় তারা চুরি, ডাকাতি করেন।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে আহত এই শিক্ষক বলেন, সবচেয়ে কষ্টের কথা আমি যে ছাত্রদের শিক্ষা দিয়েছি তারাই আমাকে কুপিয়েছে। হামলায় অংশ নেওয়া তিন-চারজন আমার সরাসরি ছাত্র। যাদেরকে এই হাতে শিক্ষা দিলাম সেই ছাত্ররাই আমার হাতের কবজি কেটে দিয়েছে! এখন পুরোপুরি সুস্থ হয়ে আবারও শিক্ষকতায় ফিরে যেতে চান বলে জানান এই শিক্ষক।

তোফাজ্জেল হোসেনের ছোট ছেলে নাজমুস হাসিব   বলেন, আমার বাবা খুব সহজ-সরল একজন মানুষ। তিনি কোনো অন্যায় সহ্য করতে পারেন না। সন্ত্রাসীরা স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত। তাদের অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় এবং তাদের বিরুদ্ধে কথা বলার কারণে আমার বাবার আজকের এই পরিস্থিতি। আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

যে ছাত্রদের পড়িয়েছি তারাই আমার হাতের কবজি কেটেছে’

প্রকাশিত : শনিবার, ২৫ জুন ২০২২

ঢাকা মেডিকেল কলেজে (ঢামেক) হসপাতালের ১০২ নম্বর ওয়ার্ডের ১১ নম্বর বিছানায় শুয়ে কবজি বিচ্ছিন্ন হওয়া হাতের দিকে অপলক তাকিয়ে ছিলেন কলেজশিক্ষক তোফাজ্জেল হোসেন (৫২)। যে হাতে লিখে শিক্ষার্থীদের পড়াতেন তিনি সেই ডান হাতের কবজি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে সন্ত্রাসীদের ধারালো অস্ত্রের কোপে। এই শিক্ষকের কাছে সবচেয়ে কষ্টের বিষয়, তিনি যে ছাত্রদের পড়িয়েছেন তারাই ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তার কবজি বিচ্ছিন্ন করেছেন।

আহত শিক্ষক কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার বাঁশগ্রাম আলাউদ্দিন আহম্মেদ কলেজের অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর শেষ করে প্রায় ১২ বছর ধরে ওই কলেজে শিক্ষকতা করেন তোফাজ্জেল হোসেন।

কুপিয়ে কবজি বিচ্ছিন্ন করার ঘটনায় কুমারখালী থানায় তোফাজ্জেল হোসেনের বড় ছেলে একটি মামলা করেছেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার (৩১ মে) দুপুরে কলেজ থেকে বের হয়ে বংশীতলা এলাকা দিয়ে শহরে যাচ্ছিলেন তোফাজ্জেল হোসেন। এ সময় তাকে কয়েকজন সন্ত্রাসী ঘিরে ধরে পেটাতে থাকেন। তিনি সেখান থেকে দৌড়ে কয়েক শ গজ দূরে নির্মাণাধীন একটি সেতুর ওপর যান। সেখানে অবস্থান নেওয়া আরও ১০-১২ জন সন্ত্রাসী রামদা-চাপাতি দিয়ে তাকে কোপাতে থাকেন।

শিক্ষক তোফাজ্জেল হোসেন পড়ে গেলে তার পিঠেও এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকেন হামলাকারীরা। এরপর হামলাকারীরা চলে গেলে স্থানীয় লোকজন তোফাজ্জেলকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। ওই দিন সন্ত্রাসীদের এলোপাতাড়ি কোপে তার বাঁ পাজর, মেরুদণ্ডের হাড়সহ শরীরের ১৩টি স্থানে গুরুতর জখম হয়। কুষ্টিয়া জেলারেল হাসপাতালে অস্ত্রোপচার শেষে ওই দিন রাতেই ঢামেকে নিয়ে আসা হয় তাকে।

ঢামেক হাসপাতালের পুরোনো ভবনের নিচতলার ১০২ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসা চলছে তোফাজ্জেল হোসেনের। শুক্রবার (৩ জুন) ওই ওয়ার্ডের ১১ নম্বর বিছানায় তোফাজ্জেল হোসেনকে শুয়ে থাকতে দেখা যায়। জ্ঞান ফিরলেও কথা বলতে কষ্ট হচ্ছিল তার। খুব ধীরে ধীরে দু-একটি কথা বলছেন তিনি।

কথা বলতে চাইলে কলেজশিক্ষক তোফাজ্জেল হোসেন  বলেন, ১০ থেকে ১২ জন মিলে রামদা আর চাপাতি দিয়ে কুপিয়েছেন। আমিতো কোনোদিন কারও ক্ষতি করিনি। দীর্ঘ ১২ বছর যে হাত দিয়ে লিখে শিক্ষাদান করে আসছি সেই হাত কেটে দিল সন্ত্রাসীরা! যারা হামলা করেছেন তাদের সবাইকে আমি চিনি। এলাকায় তারা চুরি, ডাকাতি করেন।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে আহত এই শিক্ষক বলেন, সবচেয়ে কষ্টের কথা আমি যে ছাত্রদের শিক্ষা দিয়েছি তারাই আমাকে কুপিয়েছে। হামলায় অংশ নেওয়া তিন-চারজন আমার সরাসরি ছাত্র। যাদেরকে এই হাতে শিক্ষা দিলাম সেই ছাত্ররাই আমার হাতের কবজি কেটে দিয়েছে! এখন পুরোপুরি সুস্থ হয়ে আবারও শিক্ষকতায় ফিরে যেতে চান বলে জানান এই শিক্ষক।

তোফাজ্জেল হোসেনের ছোট ছেলে নাজমুস হাসিব   বলেন, আমার বাবা খুব সহজ-সরল একজন মানুষ। তিনি কোনো অন্যায় সহ্য করতে পারেন না। সন্ত্রাসীরা স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত। তাদের অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় এবং তাদের বিরুদ্ধে কথা বলার কারণে আমার বাবার আজকের এই পরিস্থিতি। আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই।